ঢাকা,সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

কেরামত আলীর ঈদ ভাবনা

mail.google.comঅাতিকুর রহমান মানিক ::

ঈদ আসে ঈদ যায়। প্রতিবছর ঈদের সময়টায় কেমন যেন দোটানায় পড়ে যায় কেরামত আলী। রমজানের শেষ দিকেই মূলতঃ ঈদ উদযাপনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু হয়। ঈদ উৎসব সার্বজনীন হলেও আমাদের সমাজ ব্যবস্হায় যেন এর বাস্তবতা খুঁজে পায়না কেরামত। বরং বিভিন্ন বৈষম্য প্রকট হয়ে ধরা পড়ে তার চোখে। ঈদ যেন এখানে দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে, ঈদের বেশ আগে থেকেই দেখা যায় শপিং মল গুলো বাহারী আলোকসজ্জায় ঝলমল করে, কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। একদাম, দুইদাম ও বহুদামের আউটলেটে হাবিজাবি যত্তসব পোশাকের গলাকাটা দামে  বিত্তবানদের হৈ-হোল্লোড় চোখে পড়ে। অন্যদিকে বিউটি পার্লারে ধনীর দুলালী-গৃহিনীদের লম্বা লাইন ও শেষে মোটা অংকের “বিউটিফিকেশন বিল”। আর সবশেষে ঈদের দিন বাসায় বাড়ীতে রকমারী সব নাম ও স্বাদের রান্নার আয়োজন। বিরিয়ানী, কোপ্তা, রোষ্ট, পোলাও, দরজা (জরদা) জানালা ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার ঈদের পরে কাছের ও দুরের বিভিন্ন ট্যুরিজম স্পটে এন্টারটেইনমেন্ট ট্যুর। এই হল একশ্রেণীর ঈদ উদযাপন, যারা সমাজে বিত্তবান হিসাবে পরিচিত। কে কত বেশীদামের জামা-জুতা কিনতে পারে, কত বেশী খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করতে পারে ঈদ যেন তারই মহড়া। এদের কাছে ঈদ মানেই আনন্দ।
কিন্তু সমাজের আরেকটা শ্রেনীর কাছে ঈদ মানে আতংক। অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত এদের কাছে ঈদ উৎসব কোন আনন্দের বার্তা বয়ে আনেনা। সীমিত আয়ের এসব লোকজনের আয় ঈদ উপলক্ষে বিন্দুৃমাত্রও বাড়েনা। ফলে জীবনধারনের জন্য নিয়মিত রুটি-রুজির বাইরে কিছু খরচাপাতি করা তাদের জন্য একপ্রকার দুঃস্বপ্ন বললেই চলে। কিন্তু চারদিকের অবস্হা উল্টো। এর সাথে তাল মেলাতে পারেনা তারা। বিত্তবানদের কেনাকাটার বাহার ও রকমারী আহার যেন তাদের বিদ্রুপই করে। কেরামত অসচ্ছল অনেক দম্পতির কথা জানে, ঈদে নিজেরা কিছু কেনাকাটা না করেনা। কিন্তু তাদের অবুঝ সন্তানরাতো তা বুঝার কথা নয়। কারন রুক্ষ পৃথিবীর কঠোর বাস্তবতার সাথে এখনো পরিচিত হয়নি কোমলমতি এসব শিশু। তাই অন্য সবার মত তাদেরও জামা চাই জুতো চাই। কিন্তু অসহায় পিতামাতার কিইবা করার আছে ? তাদের কাছে আঙ্গিক সাজ-সজ্জার চেয়ে পেটে জামিন দেয়াটাই যে বেশী দরকারী। তাই তাদের কাছে ঈদ মানেই দীর্ঘশ্বাস। ঈদের দিন তারা সাজ-পোশাকে ঝলমল করেনা,  বাড়ীতে বিশেষ কোন অাইটেম রান্না হয়না, দুরে কোথাও বেড়ানো হয়না, এই হল তাদের ঈদ! এরা চায় ঈদটা তাড়াতাড়ি চলে যাক, আর জামা-জুতাসজ্জিত বিত্তবানরা অাফসোস করে এত তাড়াতাড়ি ঈদ শেষ হয়ে গেল? একই সমাজে দুইরকম অনুভূতি। এ কেমন সমাজ ব্যবস্হা আমাদের, কেরামতের মনে প্রশ্ন জাগে।
তাই প্রতিবছর ঈদ এলেই দোটানায় ভূগে সে। বাহারী পাঞ্জাবী-জামা-জুতা-আতর-গোলাপে সজ্জিত হয়ে ঈদ উদযাপন করা যেন গরীবদের বিদ্রুপ করারই নামান্তর,  এভাবে ঈদ করতে কেমন যেন বিবেকে বাঁধে তার। বরং একটু সাধারন সাজ-সজ্জায় যেন সমাজের সর্বশ্রেনীর সাথে মিশে যাওয়া যায়। ঈদ উৎসব সবার জন্য একই রকম কবে হবে, এর প্রতীক্ষায় দিন গুনে সে। জাতীয় কবি নজরুলের বিখ্যাত গানটি মনে পড়ে তার
“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে তুই আসমানী তাগিদ “।
ঈদ উৎসব-ঈদ আনন্দ সার্বজনীন করার  আসমানী তাগিদ আমাদের সমাজ ব্যবস্হায় বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন দেখে কেরামত আলী। সমাজের সবার জন্য একই রকম ঈদ হলে তাই হবে আসল ঈদ সম্মিলন, এই হোক আজ ও আগামীর  প্রত্যাশা।
=====================
আতিকুর রহমান মানিক
ফিশারীজ কনসালটেন্ট ও সংবাদকর্মী।
সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার,
দৈনিক আমাদের কক্সবাজার।
মুঠোফোন – ০১৮১৮ – ০০০২২০
ই – মেইল – [email protected]

পাঠকের মতামত: